মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১৯ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কিশোর অপরাধ কমাতে পরিবারের ভূমিকা

কক্সবাজার ভয়েস ডট কম

শাহীন হাসনাত:

দেশজুড়ে এখন আতঙ্কের নাম দাঁড়িয়েছে কিশোর গ্যাং। স্কুল-কলেজের গন্ডি পেরোনোর আগেই কিশোরদের একটা অংশের দলবদ্ধ বেপরোয়া আচরণ ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সমাজে। এরা বিভিন্ন নামে নানা ধরনের গ্রুপে বিভক্ত হয়ে জড়িয়ে পড়ছে ভয়ংকর সব অপরাধে। তাদের হাতে হয়রানির শিকার হচ্ছে নারী-শিশুসহ সর্বস্তরের মানুষ। একইসঙ্গে কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বেড়েছে হত্যাকান্ডের ঘটনাও।

একবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে সভ্যতার চরম উৎকর্ষের যুগে আমাদের ভবিষ্যতের আশা-ভরসার স্থল কিশোর সমাজের এ বিপর্যয় সত্যিই দুঃখ ও দুর্ভাগ্যজনক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক অনুশাসন কমে যাওয়া, তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার, কিশোরদের রাজনৈতিক ব্যবহারের কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের গ্যাং কালচার গড়ে উঠছে। তাদের মতে, পুলিশের কঠোর নজরদারি এবং পরিবারের নজরদারি ও মূল্যবোধ দিয়ে কিশোর অপরাধ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।

কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের কেউ স্কুল-কলেজের গন্ডি পেরিয়েছে, কেউ-বা এখনো পড়ছে। এদের সঙ্গে যোগ হচ্ছে কিশোর বয়সের ছিনতাই ও মাদক মামলার আসামিরাও। এলাকায় আড্ডা আর খেলার ছলে অনেক কিশোরই জড়িয়ে পড়ছে গ্যাং কালচারে। এরপর জড়িয়ে পড়ছে মাদক সেবন, মাদক বহন, কারবারি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও খুনাখুনিসহ নানা অপরাধে। প্রকাশ্যে রাস্তায় গুলি করতেও তাদের হাত কাঁপছে না।

পুলিশ বলছে, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনে ঘাটতি, ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব ও আইনি জটিলতার কারণে কিশোর অপরাধ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণহীন।

কিশোর অপরাধের পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এসব কারণের অন্যতম হলো পারিবারিক সুশিক্ষার অভাব আর পিতামাতার ভূমিকা। পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ, বন্ধুত্বের প্রভাব ও স্বভাবগত কিছু কারণও রয়েছে। যেমন- সৃষ্টিজগতের প্রতি নির্দয় ব্যবহার, অতিরিক্ত অবাধ্যতা, স্কুল পলায়ন, দেরিতে ঘরে ফেরা, বেঢপ ও মলিন পোশাক পরিধান, শারীরিক অপরিচ্ছন্নতা, অকর্তিত কেশ, দুঃসাহসিকতা, অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়তা ও অতিমাত্রায় ছায়াছবিপ্রিয়তা ইত্যাদি।

তবে অসৎ সঙ্গ ও দারিদ্র্যকেও কিশোর অপরাধের অন্যতম কারণ বলা যায়। দারিদ্র্য যেকোনো অপরাধের জন্য দায়ী, তা বলাই বাহুল্য। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত পরিবারে কিশোর-কিশোরীরা তার নিত্যদিনের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে ব্যর্থ হয়। ফলে তার মধ্যে অপরাধমূলক আচরণ সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে এরা ছোটখাটো চুরি কিংবা ছিনতাইয়ে অংশগ্রহণ করে। দারিদ্র্যের কারণে আত্মহত্যা বা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় যৌনবৃত্তি গ্রহণ করতেও বাধ্য হয় অনেক কিশোর-কিশোরী।

তবে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা কিশোর অপরাধের কারণ হিসেবে মাতা-পিতাকেই বেশি দায়ী করেছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাতা-পিতার কারণে তারা অপরাধী হয়ে থাকে। যেমন সংসারত্যাগী মাতা-পিতারা সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা না করে সংসারত্যাগ করেছেন। সন্তানরা তাদের স্নেহ-মমতা থেকে বঞ্চিত থাকে। অপরাধী মাতা-পিতা সন্তানকে পাপের মধ্যে রেখে বড় করেন। কখনো তারা পাপাচারেও সন্তানের সহায়তা নেন। অপকর্মে সহায়ক মাতা-পিতারা সন্তানের অপরাধস্পৃহায় উৎসাহ দেন। আবার অনেক অসচ্চরিত্র মাতা-পিতা নির্বিচারে সন্তানের সামনে নানা অসামাজিক কাজ করেন ও কথা বলেন। তাদের কারণে সন্তান নষ্ট হয়। সমাজে কিছু অযোগ্য মাতা-পিতাও রয়েছেন। যারা সন্তানকে প্রয়োজনীয় ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাদানে অমনোযোগী। তাদের কারণেও সন্তান সুপথ হারায়।

আধুনিককালে শহরগুলোতে দেখা যায়, মা-বাবা উভয়ে ঘরের বাইরে কাজ করছেন। ফলে সন্তান তাদের উপযুক্ত স্নেহ-শাসন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই তারা আচরণে বিদ্রোহধর্মী হয়ে যাচ্ছে। এমনটিও দেখা যায় যে, মৃত্যু কিংবা বিবাহবিচ্ছেদের ফলে কোনো কোনো কিশোর মা অথবা বাবাকে হারাচ্ছে। বাবা-মার একাধিক বিয়েও কিশোরদের স্বাভাবিক বিকাশে সমস্যা দেখা দেয়। তখন তারা জেদের বশবর্তী হয়ে নানা সমাজবিরোধী কাজকর্মে লিপ্ত হয়।

বস্তুত পরিবার হলোসমাজের প্রাণকেন্দ্র। সামাজিক সম্পর্ক সৃষ্টি ও বৃদ্ধি হয় পরিবারকে কেন্দ্র করে। মানবজাতির প্রথম ঐক্যের ভিত্তি হলোপরিবার। পরিবারকেন্দ্রিক গড়ে ওঠা উন্নত সংস্কৃতির কারণে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ মানসিক দিক থেকে অনেক সুখী। ভোগবাদী মানসিকতা

ও পরিবর্তিত সমাজব্যবস্থার কারণে বর্তমানে সে সুখের জায়গায় চিড় ধরেছে। পারিবারিক সুখের বন্ধনগুলো ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। এর শিকার হচ্ছে শিশু-কিশোররা।

এমন প্রেক্ষাপটে ইসলামের অনুসরণ অনস্বীকার্য। কারণ সন্তানদের সঠিক প্রতিপালনের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে ইসলাম। ইসলাম অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগে অঙ্কুরেই তা বিনষ্ট করতে চায়।

মানুষের মন পবিত্রকরণ, আত্মা বিশুদ্ধকরণ এবং তাদের পাপ ও অভিশপ্ত কাজে জড়িত হওয়া থেকে রক্ষার জন্য ইসলামে অবশ্য পালনীয় দুটি ইবাদত সর্বজনপরিচিত, মৌলিক ও ব্যাপক প্রভাবশালী ইসলামি জীবনে সর্বাধিক গুরুত্বের অধিকারী। এ দুটি ইবাদত হলো নামাজ ও রোজা। মূলত এ দুটি ইবাদতই বিশেষ প্রশিক্ষণস্বরূপ।

আবু দাউদ শরিফে নামাজ অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমাদের সন্তানকে সাত বছর বয়সে নামাজ পড়ার নির্দেশ দাও।’ নামাজ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালার ঘোষণা হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে সর্বপ্রকারের নির্লজ্জ ও ঘৃণ্য কাজকর্ম থেকে বিরত রাখে।’ সুরা আনকাবুত : ৪ আর রোজা মানব মনের যাবতীয় কুপ্রবৃত্তির ওপর লাগাম দিয়ে রোজাদারকে যাবতীয় অপকর্ম থেকে বিরত রাখে। সুতরাং কিশোর বয়স থেকেই আমাদের সন্তানদের নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি নামাজ আদায় ও রোজা পালনে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে অপরাধের মাত্রা কমে আসবে।

লেখক: মুফতি ও ইসলামবিষয়ক লেখক

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION